আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগটি এডসেন্স এপ্রুভালের জন্য উপযোগী করবেন যেভাবে

এডসেন্স এপ্রুভাল টিপস

অতীতে ব্লগে এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া সমান এমন কথা দেশি বিদেশি অনেক ব্লগে দেখতে পাওয়া গেলেও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারলাম ব্লগে এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া আসলেই খুব সহজ। আর বর্তমানে গুগল এডসেন্স এপ্রুভালের শর্তেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে বরাবরের মতো গুগল যেহুতু কোয়ালিটির ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট তাই ব্লগ বা সাইটটিকে কোয়ালিফাই করার জন্য বেশ কিছু দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হয়। অনেকে হয়তো তাই বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন পপক্যাশ, পপএডস, ইনফোলিংকস বা রিভিনিউ হিটসের মতো এড নেটওয়ার্ক। এসব নেটওয়ার্ক থেকে ব্লগ মনিটাইজেশন যেমন কম লাভজনক তেমনি সাইটের কোয়ালিটি ও ট্রাফিকের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে।


এই পোস্টে আমি আপনাদেরকে দেখাবো কিভাবে আপনার ব্লগটি এডসেন্স উপযোগী করে তুলবেন এবং এডসেন্স সম্পর্কে প্রচলিত ভূল ধরণা সম্পর্কে আলোচনা করব।

ডোমেইন

অনেকেই আপনাকে হয়তো বলবে এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে আপনাকে টপ লেভেল ডোমেইন লাগবে, ডোমেইনের মেয়াদ ৬ মাস হওয়া লাগবে ব্লা ব্লা....। সত্যি বলতে ডোমেইনের মেয়াদ ১ মাস হলেই যথেষ্ট এবং আপনি সাব ডোমেইন দিয়েও এডসেন্স এপ্লাই করতে পারবেন ( অর্থাৎ blogspot.com বা এই ধরণের ওয়েবসাইটেও এপ্রুভাল পাওয়া সম্ভব )। তবে এর মানে আপনি Wapka, Wapkiz বা অনান্য নিম্নমানের সাব ডোমেইন দিয়ে এডসেন্স এপ্রুভাল পাবেন এমনটা নয়। মূলত সার্চ কনসোলে আপনার সাইটটি সম্পূর্ণ ইনডেক্স হলে এবং সার্চ পেজ থেকে অর্গানিক ভিজিটর আসা শুরু করলে বুঝবেন আপনার ডোমেইনের যথেষ্ট বয়স হয়েছে।

ডিজাইন

সবার আগে যে জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো আপনার সাইটের ডিজাইন। সাইটটির লেআউট রেসপন্সিভ অর্থাৎ মোবাইল ও পিসি দুটি ভার্সনের উপযোগী করে তুলতে হবে। কন্টেন্টের পাশাপাশি সাইটের নেভিগেশন মেন্যু, পেজিং, ফুটারও ভালোভাবে সাজাতে হবে। সেই সাথে সাইটের কালার কম্বিনেশনের দিকেও লক্ষ্য রাখবেন, যেন টেক্সট পড়তে অসুবিধা না হয়। যারা ক্রোম ডেভ-টুল ব্যবহার করতে পারেন তারা ইন্সপেক্টশন করে দেখতে পারেন যে কোনো এক্সেসিবিলেটি ওয়ার্নিং দেখাচ্ছে কি না। তাছাড়া Web.Dev এর টুল ব্যবহার করেও আপনার সাইটের হেল্থ চেক করতে পারবেন। এছাড়াও সাইটের লেআউটে এডসের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা উচিত। আর হ্যাঁ, অনেকে দেখলাম অতিরিক্ত স্টাইল ব্যবহার করে সাইটের লোডিং টাইম বাড়িয়ে ফেলেন। এমনটা ভুলেও করবেন না। এতে বাউন্স রেট বেড়ে যাবে এবং পেজ স্পিড কমে যাবে, তাই এডসেন্স এপ্রুভাল পাবেন না। চেষ্টা করবেন যেন পেজস্পিড ইনসাইট স্কোর মোবাইল ভার্সনে ৬০+ থাকে। পেজস্পিড ইনসাইট স্কোর চেক,করতে পারবেন এখান থেকে

কন্টেন্ট

ব্লগে কমপক্ষে ১৫-২০ টি পোস্ট থাকতে হবে। এবং কমপক্ষে ৪০০-৫০০ ওয়ার্ডের পোস্ট হতে হবে। অথবা ১০ টি ১৫০০-২০০০ শব্দের আর্টিকেল লিখবেন, এবং পোষ্টগুলো একটি নিশের উপর লিখবেন। পোষ্টগুলাতে অবশ্যই থাম্বনেইল রাখবেন, এবং প্রয়োজনে পোষ্টেও ছবি যুক্ত করবেন। ব্লগে কপি-পেস্ট কন্টেন্ট প্রকাশ করা যাবে না এবং চেষ্টা করুন নিজের মতো করে ব্লগে পোস্ট লিখতে। কোনো সোর্স হতে অংশ উদ্ধতি করতে ব্লক কোট ট্যাগ ব্যবহার করুন সাথে সম্ভব হলে অরিজিনাল সোর্স যুক্ত করে দেবেন। কারণ ভূলভাল কপিরাইট যুক্ত পোষ্ট করার জন্য শুধু এডসেন্স বাতিলই না বরং গুনতে হতে পারে বিশাল অংকের জরিমানা। সেজন্য কপিরাইট আইন ১৯৭৬, সেকশন ১০৭ অনুযায়ী ফেয়ার ইউজ পলিসি মেনে চলুন।
ফেয়ার ইউজের মানে হলো আপনি কপিকৃত কন্টেন্ট ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবেন না, এবং আপনি মূল সোর্স বা লেখককে কার্তেসী দিতে বাধ্য
ব্লগ পোস্ট শুধু ইউনিক হলে চলবে না, পোস্টটিকে এসইও ফ্রেন্ডলি করে তুলাও দরকার।

এড, বট বা ম্যালিসিয়াস স্ক্রিপ

ব্লগে পপআপ, পপআন্ডার এডস ব্যাবহার করা যাবে না। মাইনিং বট, অটোক্লিক বা যেকোনো অটো স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা যাবে না। অপ্রয়োজনীয় স্ক্রিপ্ট সব রিমুভ করতে হবে (যদি থাকে)।

এসইও

আপনার ব্লগ বা সাইটকে গুগল সার্চ কনসোলে সাইটম্যাপ সহ সাবমিট করতে হবে। সাইট পুরোপুরি ইনডেক্স হতে কিছুদিন সময় লাগবে, তারপর এপ্লাই করবেন। তার আগে লক্ষ্য রাখবেন সার্চ কনসোলে কোনো ইরর দেখাচ্ছে কিনা? ইরর থাকলে তা সলভ করে নিবেন। এছাড়াও সাইটে এসইও মেটা ট্যাগসগুলো ঠিকঠাক মত আছে কিনা তা চেক করে নিবেন।
ব্লগার ব্লগের জন্য প্রয়োজনীয় সব এসইও মেটা ট্যাগস একসাথে পেতে আমাদের ব্লগার সেকশনে চেক করুন।
মেটা ট্যাগসের পাশাপাশি যদি,স্ট্রাকচারড ডাটা ব্যবহার করা সম্ভব হয় তাহলে আরও ভালো। সেটিও পেয়ে যাবেন ব্লগার সেকশনে

অননুমোদিত কন্টেন্ট

এডাল্ট বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত ওয়েবসাইট বা ব্লগে এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও অশ্লীল ভাষা যুক্ত কন্টেন্ট, এলকোহল, মাদক, জুয়া, অস্ত্র সামগ্রী, অবৈধ সামগ্রী, বিশৃঙ্খলা-উস্কানি সৃষ্টি, হ্যাকিং-ক্র্যাকিং ইত্যাদি নিয়ে অলোচনা করা হয় এমন ব্লগ বা সাইটে এডসেন্স এপ্রুভাল পাবেন না। তাই সাইটে এমন পোষ্ট থাকলে এপ্লাই করার আগে অবশ্যই রিমুভ করে এপ্লাই করবেন।

ট্রাফিক

ট্রাফিক অর্থাৎ ভিজিটর নিঃসন্দেহে এডসেন্সের রিভিনিউ বাড়ায় তথা আয়ের উপর প্রভাব ফেলে, কিন্তু অপর্যাপ্ত ট্রাফিক আপনার সাইট এপ্রুভাল বাতিলের কারণ নয়। আপনার সাইটে যদি ভালো পরিমাণ ট্রাফিক থাকে তা আপনাকে এপ্রুভালে অবশ্যই এডভান্টেজ দিবে, তবে আপনি যদি অটো ট্রাফিক জেনারেটর বট বা সাইট ব্যবহার করেন তা হয়তো আপনা সাইটে এডসেন্স এপ্রুভাল বাতিল বা এবং এপ্রুভড সাইট ব্যান হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই অযথা বাড়তি ট্রাফিকের আশায় বট বা এপ ব্যবহার করবেন না। এটি আপনার সাইটের বাউন্স রেটও বাড়িয়ে দিবে।

ডকুমেন্টেশন

সাইট সম্পর্কিতো বেশ কিছু পাতা আপনার সাইটে থাকা খুবই জরুরি। এগুলো হলো
  1. About Us - সাইট সম্পর্কে লিখবেন
  2. Contact Us - এডমিনের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে সে সম্পর্কে লিখবেন। চাইলে সরাসরি কন্টাক্ট ফরম দিয়ে দিতে পারেন।
  3. Terms and Condition - সাইট ব্যাবহারের নীতিমালা শর্ত, কপিরাইট ইত্যাদি এখানে লিখবেন।
  4. Privacy Policy - সাইটটি বাচ্চাদের উপযোগী কিনা, ভিজিটর থেকে কি ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেন, তাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, কুকিজ ইত্যাদি এই পেজে থাকবে।
  5. Report Abuse - এই পেজ থাকলে ভালো তবে না থাকলেও চলবে। এটা মুলতো কোনো পোস্ট বা ফটো রিপোর্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
আর এ পাতা গুলো যেন সহজে এক্সেস করা যায় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন। যেমন ফুটারে এবং নেভিগেশন মেন্যুতে পেজগুলো এড করে দিতে পারেন।
মাত্র এ কয়টা ব্যাপার ঠিকমতো খেয়াল রাখলেই আপানার সাইটে এডসেন্স এপ্রুভাল পাবেন আশা করি।
ব্লগার ব্লগে পর্যাপ্ত পোষ্ট থাকার পরও এডসেন্স এপ্রুভাল পাচ্ছেন না? এডসেন্স এপ্রুভ করতে টেক লিজন বিডির সার্ভিস নিতে পারেন, চার্জ মাত্র ৫১০০ টাকা।
পরবর্তী পোষ্ট পূর্ববর্তী পোষ্ট
মন্তব্য নেই
মন্তব্য করুন
comment url