আপনার ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য কার্যকর কিছু টিপস
আমরা সবাই জানি, স্মার্টফোন ছাড়া আজকাল দিন কল্পনা করাই কঠিন। কিন্তু যতই দামি ফোন হোক, যদি ব্যাটারি ব্যাকআপ মনমতো না হয় তবে ফোন ব্যবহার হয়ে উঠে দুর্বিষহ! বর্তমানের ফোনগুলতে বিশাল ক্যাপাসিটির ব্যাটারি ব্যবহার করা হলেও ঠিকমতো যত্ন না নেওয়ার কারণে অল্প দিনেই ব্যাটারি ক্যাপাসিটি অনেকটা কমে যেতে পারে, যেটা আমরা ব্যাটারি ড্যাম হয়ে যাওয়া বলি। তাই ফোনের ব্যাটারি যেন দীর্ঘদিন ভালো থাকে, সেই জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর টিপস মেনে চলা খুব জরুরি। নিচের টিপস গুলো আমি নিজেও মেনে চলার চেষ্টা করি এবং এগুলো সত্যিই কার্যকর।
২০-৮০% রুল মেনে চার্জ দেওয়া
অনেকে ভাবে ব্যাটারি ১০০% চার্জ করলেই ভালো হবে, এক চার্জে পুরোদিন চালানো যাবে বা টানা অনেকক্ষণ চালানো যাবে। কিন্তু আসলে এটা ব্যাটারির জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ব্যাটারি সাধারণত ০-২০% সবচেয়ে দ্রুত চার্জ হয়। আর ৮০% এর পর তুলনামূলকভাবে স্লো চার্জ হয়। চেষ্টা করুন ফোন সব সময় ২০%–৮০% এর মধ্যে চার্জ রাখতে। অনেক এক্সপার্ট বলে, লম্বা সময় ধরে ১০০% চার্জে রাখলে ব্যাটারি দ্রুত তার কার্যক্ষমতা হারায়, এবং এটি কোনো মিথ নয় বরং সত্য।একইভাবে ব্যাটারি ২০% এর কমে থাকলেও ব্যাটারিতে রাসায়নিক ক্ষয় সৃষ্টি হয়, ফলে ব্যাটারির লাইফ সাইকেল দ্রুত কমে যায়।তবে প্রয়োজন অনুসারে কালে-ভাদ্রে ১-২ বার ফোন ফুল চার্জ বা ডিসচার্জ করে ফেললে তেমন ক্ষতি নেই। লং টাইম ডিভাইস ইউজ না হলে ৪০-৫০% চার্জ করে বন্ধ করে সংরক্ষণ করবেন, তাহলে ব্যাটারি ভালো থাকবে।
ভালো, আসল চার্জার ব্যবহার করুন
ফোনের ব্যাটারি ভালো রাখতে ফোন অবশ্যই ফোনের সাথে আসা আসল চার্জার বা ঐ ব্যান্ডের আসল চার্জার ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজন ব্যতীত পাওয়ার ব্যাংক ব্যাবহার এড়িয়ে চলুন। এর ফলে ব্যাটারি চার্জ দ্রুত হবে এবং ব্যাকআপও ভালো পাবেন। সেম ব্যান্ডের অন্য চার্জার ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনার ফোনের রিকমেন্ডেড চার্জ আর চার্জারের চার্জ স্পিড একই কিনা বা কিছুটা কম কিনা। যেমন ৪৫ ওয়াটের চার্জার সাপোর্ট করে এমন ফোন ২৫-৩০ ওয়াটের চার্জার দিয়ে চার্জ দিলে সমস্যা নেই তবে ৬৫/৮০/১২০ ওয়াটের চার্জার দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ন। আনঅফিশিয়াল ফোনের সাথে আসা চার্জারগুলো অনেকসময় নকল হয় তাই এই ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা করবেন না
ফোন বেশি গরম হলে ব্যাটারি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গেম খেলতে খেলতে বা চার্জ দিতে দিতে ফোন বেশি গরম লাগলে একটু বিরতি দিন। ফোনের কুলিং ফিচার থাকলে তা ব্যবহার করুন। রোদে বা চুলার পাশে এমন গরম জায়গায় ফোন রাখবেন না, যাতে ফোন গরম হয়। আবার অনেকে ফোন ফ্রিজে রাখে ঠান্ডা হওয়ার জন্য যা ব্যাটারি এমনকি ফোন নষ্ট করে দিতে পারে। তাই দ্রুত ঠান্ডার জন্য ফ্যান বা এসির সাহায্য নিতে পারেন। আর ফোন কুলার থাকলে তো আরও ভালো। আমি নিচে কয়েকটি কম থেকে বেশি দামের সহজলভ্য ফোন কুলারের লিষ্ট নিচে দিয়ে দিলাম-
- FANTECH PC10 GLESTER — 1100-1300 BDT
- FANTECH PCM10 Gletser Max — 1300-1400 BDT
- Plextone EX2 Pro — 1400-1500 BDT
- Plextone EX1 Pro — 2000-2500 BDT
- Plextone EX3 Pro — 3400-3800 BDT
চার্জিং এর সময় ফোন না ব্যবহার করা
আগেও বলেছি, আবারও সতর্ক করছি! চার্জে রেখে ফোন টিপবেন না। হ্যাঁ, চার্জিং চলাকালীন ফোনে ইউটিউব দেখা বা গেম খেলা অনেকেরই অভ্যাস, কিন্তু এতে ব্যাটারি ওভারহিট হয়। ফলে চার্জ সাইকেল দ্রুত শেষ হয়ে যায়, সেটা সরাসরি চার্জার থেকে বা পাওয়ার ব্যাংক থেকে। সবসময় ফোন চার্জ করে তারপর ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।
ডার্ক মোড ও ব্যাটারি সেভার ব্যবহার
OLED বা AMOLED স্ক্রিনের ফোনে ডার্ক মোড অনেকটা ব্যাটারি বাঁচায়। আবার প্রয়োজন না হলে ব্যাটারি সেভার অন করে রাখলে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপের খরচও কমে। এছাড়া IPS বা অনান্য প্যানেলের ডিসপ্লেতেও ডার্ক মোড ব্যাটারি আর চোখের জন্য ভালো কাজ করে। (LED প্যানেলে ডার্ক মোড ব্যাটারি অনেক বেশি সেভ করে, কেন তা বুঝাতে আলাদা একটা পোষ্ট লিখা যাবে, তাই বিস্তারিত লিখলাম না।)
প্রয়োজনহীন অ্যাপ ও ফিচার বন্ধ রাখুন
বর্তমানে প্রায় সব ফোনে কম্পানিগুলো আমাদের বড় র্যামের ফোনে সাথে ফ্রিতে বড় বড় ব্লোটওয়্যার দেয়। এগুলো র্যামের পাশাপাশি চার্জও খরচ করতে চায়। তাই এপগুলো বেছে বেছে আনইন্সটল করে করে ফেলুন বা ডিসএবল করে ফেলুন। এছাড়া লোকেশন, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, মোবাইল ডেটা—যখন দরকার নেই তখন বন্ধ রাখুন। এগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক ব্যাটারি খেয়ে ফেলে।
রাতে চার্জ দিয়ে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন
রাতে চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ফোন দীর্ঘ সময় ১০০% চার্জ অবস্থায় থাকে, যা ব্যাটারির জন্য ভালো নয়। আগেই বলেছি ফোন ২০-৮০% এ চার্জ করতে তাই চেষ্টা করুন ঘুমানোর আগে চার্জ দিয়ে রেখে সকালে খুলে নেওয়ার বদলে, ঘুমানোর এক-দুই ঘণ্টা আগে চার্জ দিন, বা সকালে ঘুম থেকে উঠে চার্জ দিন।
শেষ কথা
ফোনের বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারি এবং তাদের বিহেভিয়ার নিয়ে আলোচনা করতে গেলে পোষ্টটি অনেক বেশি লম্বা ও বোরিং হয়ে যেত, তাই শুধু টিপসের দিকেই ফোকাস করেছি আমি। তারপরও আপনার প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন, আমি ফ্রি সময়ে উত্তর দিয়ে যাবো । উপরের টিপসগুলো মেনে চললে আপনার ফোনের ব্যাটারির লাইফস্প্যান অনেক বেড়ে যাবে। ফলে প্রয়োজনের সময় ফোনের চার্জ নিয়ে চিন্তা বা আফসোস করতে হবে না। তাই আজ থেকেই এই টিপসগুলো মেনে চলুন, আর আপনার ফোন আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে—অবশ্য মুখে নয়, কাজে। 😉
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের লিখা টিউটোরিয়াল আমাদের ব্লগে পাবলিশ করতে আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও যুক্ত থাকতে পারেন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে